“গৌতম চট্টোপাধ্যায়, আস্তাবলের সবচেয়ে আদিম ঘোড়া” – আল শাহারিয়া

সভ্যতার বিপ্লবী এবং আদিম ঘোড়া গৌতম চট্টোপাধ্যায়। সমৃদ্ধ ‘আস্তাবল’ এর তিনি অন্যতম ঘোড়া। টগবগে। তিনি গতানুগতিক নন, গতানুগতিক নয় যারা তাদের দলেও নন। তিনি গৌতম চট্টোপাধ্যায়। স্বপ্নেও বিপ্লবের কথা বলতেন যিনি। কারাজীবনে যিনি একটাও বিপ্লবের গান লিখেননি। লিখেছেন প্রেমের গান। বাংলা ব্যান্ডের নতুন ধারার যাত্রা যার হাত ধরেই শুরু।
“পৃথিবীটা নাকি ছোটো হতে হতে
স্যাটেলাইট আর কেবলের হাতে
ড্রইংরুমে রাখা বোকা বাক্সতে বন্দি‚
আহা হা হা‚ আ হা‚ আহা হা হা…”
বাংলা ব্যান্ডের আইকনিক গান। কার গান এটা? কে এই গানের স্রষ্টা? গৌতম চট্টোপাধ্যায়।

কতশত জীবনদর্শনের মধ্যে তার এমন কিছু দর্শন আমাকে অবাক করেছে যা এখনকার পঞ্চাশ শতাংশ মানুষের মধ্যেও দেখা যায় না। ব্যান্ড তৈরির ইচ্ছাটা অবশ্য জেগেছিল ওই দর্শন থেকেই। গানে গায়ক-গীতিকার-সুরকারের গুরুত্ব যতটা, ততটাই বাজিয়েদের। এই মনোভাব থেকেই ব্যান্ড করার চিন্তা উঠে এসেছে, প্রকাশিত এক সুন্দর কিছু হয়ে গিয়েছে। মহীনের ঘোড়াগুলির যে সমৃদ্ধ আস্তাবল আমরা পেয়েছি, যখন চিনতে শুরু করেছে শ্রোতারা— ঠিক তখনই হারিয়েছি মণি’দাকে। গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের ডাকনাম মণি।

গৌতম চট্টোপাধ্যায় আমাদের দিয়ে গিয়েছেন বাংলার সবচেয়ে তরুণ গান ‘পৃথিবীটা নাকি ছোটো হতে হতে’। বাংলা ব্যান্ডের ইতিহাসে পুরনো এবং প্রবাদপ্রতিম ব্যান্ড ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’। নামটা এসেছে জীবনানন্দ দাশের বিখ্যাত কবিতা ‘ঘোড়া’ থেকে। ‘ঘোড়া’ শব্দটার সাথে ‘আস্তাবল’ শব্দের গভীর সংযোগ। এই সংযোগ ধরেই হয়তো রঞ্জন ঘোষাল নামটা ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’ রেখেছিলেন। কিন্তু, নাম-ধামের তোয়াক্কা না করে সংগীতকে আরাধ্য করেছিলেন গৌতম চট্টোপাধ্যায়। একেক কন্সার্টে নিজেদের ব্যান্ডের নাম একেকটা বলে দিতেন। অবশ্য ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’ নাম দেওয়ার পর আর নাম পরিবর্তন করে বলেননি কোথাও। এমন আরণ্য স্বভাবের মানুষের সান্নিধ্য পেতে তবু কী ভীষণ ইচ্ছা করে!

‘মহীনের ঘোড়াগুলি’ বাংলায় নতুন গানের ধারা প্রচলন করতে গিয়ে অনেক সমালোচনায় পড়েছে। কিন্তু, দমে যাননি মণি’দা। তখন বাংলায় খুব কম সংখ্যক শ্রোতা বব ডিলান, বিটলস্, জিম মরিসন,রোলিং স্টোনস্ শুনতেন। নতুন কিছু আমজনতার মাঝে প্রচলন করতে একটু বেগ পেতেই হয়। মহীনের ঘোড়াগুলি ব্যান্ডের প্রথম অ্যালবাম ‘সংবিগ্ন পাখিকূল ও কলকাতা বিষয়ক’ এর একটা সুপরিচিত গান ‘হায় ভালোবাসি’ । এই গানের মাধ্যমে তাঁর জীবনের কথাগুলো তুলে ধরেছেন শ্রোতাদের বিপরীতে। একজন বিপ্লবী মানুষ জীবনকে নিজস্ব আদলে উপলব্ধি করেন‚ কতটা সমৃদ্ধ চিন্তাভাবনা দিয়ে চারিপাশ বেষ্টিত রাখেন তা তার গানে ফুটে উঠেছে।

গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম পহেলা জুন। তিনি মূলত একজন বাঙালি সঙ্গীতঙ্গ‚ গীতিকার‚ গায়ক‚ থিয়েটার ব্যক্তিত্ব‚ নৃতাত্তিক এবং চলচিত্র নির্মাতা। তিনি মহীনের ঘোড়াগুলি ফোক-রক ব্যন্ডের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে সবচেয়ে বেশী পরিচিত। তিনি ২০’শে জুন কোলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

গৌতম চট্টোপাধ্যায় স্মরণে
আল শাহারিয়া

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *